রাহমানিয়া দখলের ষড়যন্ত্র : জঘন্য মানসিকতার পরিচয়

জামিয়া রাহমানিয়া নামে বাংলাদেশে দুটে মাদরাসা পরিচিত। সহজে চেনার জন্য বড় রাহমানিয়া আর ছোট রাহমানিয়া বলে থাকেন অনেকে। বড় রাহমানিয়া মাওলানা মাহফুজুল হক পরিচালিত। আর ছোট রাহমানিয়া মুফতি মনসুরুল হক পরিচালিত। যদিও ছোট রাহমানিয়ার অবয়ব এখন বড় রাহমানিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ।

আমি কোনো রাহমানিয়ারই ছাত্র নয়। উভয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে এক নজরে দেখি হামেশা। দুটো মাদরাসায় গিয়েছি, দেখেছি, কিছু সময় অবস্থানও করেছি। তবে মাওলানা মামুনুল হককে বেশি  ভালোবাসি, পছন্দ করি, সাপোর্ট করি তার অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের কারণে। রাহমানিয়ার কারণে নয়। যারা মাওলানা মামুনুল হককে সাপোর্ট করেন, ভালোবাসেন, তার দল করেন_ তাদের কেউই রাহমানিয়ার কারণে এসব করেন বলে মনে হয় না আমার। বরং তার অমায়িক ব্যক্তিত্ব মানুষকে মুগ্ধ করেছে।

দুপক্ষই মোটামুটি সোস্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করে নিজেদের সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন আর অপর পক্ষকে ধুয়ে দিচ্ছেন। এটা স্বাভাবিক নিয়ম, সবাই নিজেরটা বোঝে সবসময়। কিন্তু দুঃখ ও আফসোসের বিষয় হলো উভয় পক্ষই আলেমসমাজ! ওলামায়ে কেরামের ইজ্জত ও সম্মান নিয়ে তামাশা করছেন তারা! একটু ভাববেন প্লিজ! হে আলেমসমাজ!

রাহমানিয়ার অতীত ইতিহাস যেমনই হোক_ হোক তা গর্হিত, নিন্দনীয়, ঘৃণিত কিংবা ন্যাক্কারজনক_ তাতে কি আমাদের কোনো ক্ষতি হয়েছে? না ক্ষতি হয়নি বরং লাভ হয়েছে। আমরা আরেকটি রাহমানিয়া পেয়েছি। বসুন্ধরা থেকে শাইখ যাকারিয়া সৃষ্টি হয়েছে। লালবাগ থেকে বড় রাহমানিয়া জন্ম নিয়েছে। ওলামায়ে কেরামের এখতেলাফ রহমত স্বরুপ- এ কথা তো আমরাই বলি।

কিন্তু আপনারা এখন যা শুরু করেছেন, এতে দীন ও ইসলামের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। কওমি মাদরাসা ও আলেমসমাজের স্বকীয়তা, সম্মান ও গৌরবের আলোকোজ্জ্বল ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে। আপনাদের এখন বড় রাহমানিয়া চেয়েও বড় রাহমানিয়া হয়েছে, দৃষ্টিনন্দন মসজিদসহ বিশাল বিল্ডিং আল্লাহ তায়ালা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তারপরেও কেন এই ভাঙ্গাচোরা রাহমানিয়া নিয়ে হীন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন!

আচ্ছা যদি সরকারের মদদে বড় রাহমানিয়া আপনাদের দখলে চলেও যায়, তখন কী হবে! আপনাদের কী লাভ হবে! দীনকে কী ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন বড় রাহমানিয়া হাতিয়ে নিয়ে! অতীত যতোটা জঘন্য তার চেয়েও জঘন্যতম কাজ তো এখন আপনারা প্রসব করছেন!

একটি বিষয় খিয়াল করুন গভীর মনোযোগ দিয়ে, রাহমানিয়া নিয়ে ঠেলাঠেলি ও গুঁতোগুঁতি পুরনো হলেও সম্প্রতি যে তামাশা চলছে, তার নেপথ্যে কারা ইন্ধন যোগান দিচ্ছে তা কি ভেবে দেখেছেন? মাওলানা মামুনুল হক কারাগারে, মাদরাসাগুলো বন্ধ, দেশের অবস্থা অস্থিতিশীল, কওমিয়ানদের নিবন্ধনভুক্ত করণের অপচেষ্টা_ এমন সময় রাহমানিয়া বিরোধ তুঙ্গে তোলার অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন।

হে মুফতি মনসুরুল হক, আপনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম। নিজের অবস্থানকে কোনো রক্তচক্ষুর নীরব জুলুমে কুয়াশাচ্ছন্ন করবেন না। যে সম্মান ও গৌরব উপার্জন করেছেন সারাজীবন তা হারাতে কিন্তু এক সেকেন্ডও লাগবে না। অদৃশ্য কোনো রক্তচক্ষুর বিষয় থাকলে আমাদের বলুন, আকাবিরদের শরণাপন্ন হলে আপনার সম্মান কিন্তু এক চুলও কমবে না।

ছোট রাহমানিয়ার সৈনিকদের বলছি, বড় রাহমানিয়া জাতিকে যা দিয়েছে ছোট রাহমানিয়া কিন্তু এখনও তা দিতে পারেনি! এক মামুনুল হক তৈরি করতে ছোট রাহমানিয়ার আরও কয়েক যুগ লাগবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

জামিয়া রাহমানিয়াকে কেন্দ্র করে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. কে হেয় প্রতিপন্ন করা, জাতির সামনে তাকে ছোট করে উপস্থাপন করা আমাদের জন্য কস্মিনকালেও উচিত হবে না। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. কে নিয়ে যে অবাঞ্ছনীয় লেখালেখি চোখে পড়ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক! মনে রাখবেন মৃত আকাবিরদের জীবনীর ভালো দিককে উপেক্ষা করে খারাপ দিক নিয়ে খোঁচাখোঁচি করা আমাদের জন্য শুভ বার্তা কখনও বয়ে আনবে না!
কপি


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করুন

কী দোষ ছিল?

নামাজী স্ত্রীর কান্ড।