হেফাজতের সেকাল একাল

হেফাজতের একাল সেকাল (পর্ব ৫)

রাজনৈতিক সমর্থন ও শাহবাগের পক্ষ বিপক্ষের মেরুকরণ

শাহবাগ বিরোধী অবস্থানে রাজনৈতিক দল বিএনপি

শাহবাগের মঞ্চ কায়েমের মূল মদদদাতা যে আওয়ামিলীগ ছিল এটা নিয়ে তেমন বিতর্ক নেই৷ তবে হেফাজতের সাথে বিএনপি বা জামায়াতের সম্পর্কের প্রসঙ্গে নানান বিতর্ক আছে। কে কার মাথায় কাঠাল ভাংতে চেয়েছিল এ নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় চলছে বহুদিন ধরেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন হেফাজতের সিদ্ধান্তে কোন প্রভাব বিস্তার করেছিল কিনা এ প্রশ্নের মীমাংসা জরুরী। এই ক্রিটিকাল বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক কথা বলার আগে শাহবাগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, বিবৃতি ও তার সময়কাল আমলে নিতে হবে।

শাহবাগ কায়েম হওয়ার পর পর পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে সেটা বুঝতে রাজনৈতিক দলগুলো একটু সময় নেয়। বিএনপির মত বড় দলও জামায়াতের সাথে ডাকা কর্মসূচী স্থগিত করে। ঘটনাটা ছিল এমন, শাহবাগে জড়ো হওয়ার দিনই ১৮ দলের জরুরী বৈঠক ডাকে বিএনপি। ৯ ফেব্রুয়ারী নয়াপল্টনে ১৮ দলের সমাবেশ কর্মসূচী ঘোষণা করে। কিন্তু আগেরদিন জানায় যে সমাবেশ হচ্ছেনা। ধারণা করা হচ্ছিল, জামায়াতের বিরুদ্ধে শাহবাগকে মিডিয়া যেভাবে বড় করে দেখাচ্ছে এতে বিএনপির মত দলও সংশয়ে পড়ে গিয়েছিল। জামায়াতের সাথে রাজপথে নামলে সেটা জনগণ ভিন্নভাবে দেখার একটা আশংকা ছিল। মিডিয়ার কল্যানে শাহবাগের প্রভাব বিস্তারের পরিস্থিতি প্রথম সপ্তাহে অনেকটা এমনই ছিল।

এই সংশয়ের প্রভাব বিএনপির বিবৃতিতেও পড়েছিল।
১১ই ফেব্রুয়ারী শাহবাগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি৷ জানায় "শাহবাগে ফ্যাসিবাদের সুস্পষ্ট প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে"।
(প্র আ ১২/২/১৩)

১২ই ফেব্রুয়ারী বিএনপির বিবৃতির মাধ্যমে স্বাগত জানায় শাহবাগকে৷ বলে, ক্ষমতায় গেলে তারাও একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার করবে৷
(প্র আ ১৩/২/১৩)

তবে এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে যেদিন আওয়ামী নেতারা শাহবাগের কর্মসূচী পালনে শহিদ মিনারে যায়।

১২ই ফেব্রুয়ারী শাহবাগের একটা কর্মসূচী ছিল৷ সে কর্মসূচী পালন করতে শহিদ মিনারে যায় আওয়ামী জোটের ১৪ দলের নেতারা৷ শাহবাগের সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ সেলিম, সাজেদা কে চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, মাহবুবুল আলম হানিফ ও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর মত ক্ষমতাসীন নেতারা। এ ঘটনার পর পক্ষ বিপক্ষ স্পষ্ট হতে শুরু করে যায়।
(প্র আ ১৩/২/১৩)

আরো স্পষ্ট হয়, ব্লগার রাজীবকে যখন আওয়ামিলীগ জাতীয় বীর আখ্যা দেয়৷ এর প্রতিবাদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেছিলেন, "ইসলামের উপর আঘাতকারী ব্লগারদের জাতীয় বীর আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। ধর্মপ্রাণ জনগণ ক্ষেপে গেলে কেউ রেহাই পাবেনা৷ "

শাহবাগের এন্টি ইসলামিস্ট ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিএনপি স্পষ্ট বিবৃতি দেয় ১৮ই ফেব্রুয়ারী। বলে, "অনলাইনে ব্লগাররা মহানবীকে কটুক্তি করা হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।"
(ইনকিলাব, ১৯/২/১৩)

হেফাজত তখনও মাঠে আসেনি৷ ইনফ্যাক্ট, ব্লগারদের ব্যাপারে বিএনপি অবস্থান স্পষ্ট করার পরদিন আল্লামা আহমদ শফি সাহেব জাতির উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন।

এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, শাহবাগের বিরুদ্ধে কারা ইতিমধ্যেই অবস্থান নিয়েছে, আন্দোলনে কারা মিত্রশক্তি হতে পারে, হেফাজতকে এই হিসাবগুলো করেছে। আমার দেশে বিজ্ঞাপন ক্যাটাগরিতে খোলাচিঠি পাঠিয়ে প্রথমেই এর প্রমাণ দিয়েছে হেফাজত। কারো সাথে মিত্রতা না করে নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবলে আন্দোলন এত অল্প সময়ে এতটা ফলপ্রসূ হত না। একেবারে অখ্যাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে এত অল্প সময়ের ভেতর এত বড় বিপ্লব সম্ভব হত না।

(উল্লেখ্য যে, ২০১৩ এর আগে ধর্মীয় ইস্যুতে অরাজনৈতিক আন্দোলনগুলো হত ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে।)

২২ শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম কর্মসূচীতে রাজপথে নামে তৌহিদী জনতা। বিএনপি বিবৃতির মাধ্যমে শাহবাগবিরোধী অবস্থান জানান দিলেও হেফাজতের সাথে রাজপথে নেমে আসে জামায়াত। এই ইস্যুতে হেফাজতের সাথে আনঅফিশিয়ালি জামায়াতের আন্দোলনটা এখান থেকেই শুরু...

চলবে...


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কী দোষ ছিল?

দীনদ্বার গরীবের ঘরেও রয়েছে আপনার বোন/মেয়ের সুখ